আরোহ অনুমানের মূল সমস্যা কী? কীভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব?
আরোহ অনুমানের সমস্যা:
আরোহ অনুমানের লক্ষ্য হল বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন গঠন করা এবং তার বস্তুগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা। যেমন-
উদাহরণ:
রাম হয় মরণশীল।
শ্যাম হয় মরণশীল।
অজয় হয় মরণশীল।
অতএব, সকল মানুষ হয় মরণশীল।
উপরোক্ত আরোহ অনুমানে কয়েকজন মানুষের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’-এইরূপ বচনটির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন সমস্যা হল আমাদের সীমিত অভিজ্ঞতায় কয়েকজন মানুষের মরণশীলতাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কিন্তু অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষের মরণশীলতাকে পর্যবেক্ষণ করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। কাজেই এক্ষেত্রে আমাদের দুটি সমস্যা বিশেষভাবে দেখা দেয় যা আরোহ অনুমানের মূল সমস্যা। সেগুলি হল- (a) সীমিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বা বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের ভিত্তিতে কীভাবে সামান্য সংশ্লেষক বচন গঠন করা যাবে? (b) কীভাবে এই সামান্য সংশ্লেষক বচনের বাস্তব সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে?
আরোহ অনুমানের সমস্যার সমাধান:
আরোহ অনুমানের সমস্যার সমাধানের জন্য যুক্তিবিজ্ঞানীগণ আরোহ অনুমানের দুটি মৌলিক নিয়ম বা নীতির উপস্থাপনা করেছেন। এই দুটি নিয়মের উপর ভিত্তি করেই আমরা আরোহ অনুমানে বিশেষ বিশেষ ঘটনা থেকে সামান্যে উপনীত হওয়ার সমস্যা সমাধান করতে পারি। এই নিয়ম দুটি হল-(a) প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং (b) কার্যকারণ নিয়ম।
প্রকৃতির একরূপতা নীতি : প্রকৃতির একরূপতা নীতির মূলকথা হল প্রকৃতি সম অবস্থায় সম আচরণ করে। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই আরোহ অনুমানে সামান্যীকরণ সম্ভব হয়। এই নীতি অনুসারে আমরা বিশেষ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু দেখে অনুমান করি যে, ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’। কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটলে প্রকৃতি একইরকমের আচরণ করবে। এই নিয়ম অনুসারে যে যে কারণের জন্য রাম, শ্যাম, অজয় প্রমুখের মৃত্যু অতীতে ঘটেছে, সেইসব কারণের পুনরাবৃত্তি ঘটলে ভবিষ্যতে সকল মানুষ অবশ্যই মারা যাবে।
কার্যকারণ নিয়ম: কার্যকারণ নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ঘটনারই কারণ আছে। এই নিয়মের ভিত্তিতেই আরোহ অনুমানে সামান্যীকরণ করা হয়। আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তে দুটি বিষয়ের মধ্যে যে সম্বধ স্বীকার করা হয় তা যদি কার্যকারণ নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তবে সেটি সার্বিক ও আবশ্যিক হয়ে থাকে। একইভাবে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’-এক্ষেত্রে মানুষ ও মরণশীলতার মধ্যে কার্যকারণ সম্বধ বর্তমান রয়েছে। এই কার্যকারণ নিয়মের উপর ভিত্তি করেই আমরা বিশেষ ক্ষেত্রে কয়েকজন মানুষের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’- এই সামান্য সংশ্লেষক বচনটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই।