‘এক বাও মেলে না। দো বাঁও মেলে-এ-এ না’-কে, কখন এ কথা বলেছে? এই উক্তির মধ্য দিয়ে লেখক আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
যে, যখন বলেছে: রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিক মামাবাড়িতে থাকাকালীন যখন প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তখন প্রলাপের মধ্যে সে খালাসিদের মতো সুর করে বলেছে-“এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে-এ-এ না।” স্টিমারের খালাসিরা কাছি ফেলে জল মাপার সময় কেমন সুর করে কথা বলে, তা মামার সঙ্গে কলকাতা আসার সময় পথে শুনেছিল। ফটিক। জ্বরের ঘোরে সেই সুর সে অবচেতনে উচ্চারণ করেছে।
ব্যাখ্যা: শহরের হৃদয়হীন বাতাসে যখন ফটিকের দম বন্ধ হয়ে এসেছে, সে ফিরতে চেয়েছে আপন সাম্রাজ্যে-প্রকৃতিলগ্ন গ্রামজীবনের উদার-উন্মুক্ত স্বাধীন জীবনে। মামার বাড়িতে মামির নির্দয় আচরণ তাকে বারেবারে পীড়িত করেছে। স্কুল থেকে ফিরে এসে ফটিকের জ্বর আসলে সে তখন মামিকে অকারণ-অনাবশ্যক জ্বালাতন করতে না চেয়ে বর্ষণমুখর রাতের অন্ধকারে বাড়ি ছেড়েছে। সে শহরের দমবন্ধ আবহাওয়া থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে। হঠাৎ জ্বর আসায় সে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় একাই। পরে বিশ্বম্ভরবাবুর তৎপরতায় পুলিশ তাকে খুঁজে আনে। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে তার জ্বর তখন প্রবল। ডাক্তার আসেন, বিশ্বম্ভরবাবু নিরন্তর সেবা করে চলেন। তবু ফটিকের শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয় না। প্রবল জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়ে সে সুর করে খালাসিদের মতো উচ্চারণ করে-“এক বাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে-এ-এ না।” আসলে রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চান মৃত্যুপথযাত্রী ফটিক যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করেছে, তার যেন কোনো তল পাচ্ছে না সে। ফটিকের চেতনার গভীরে সেই অভিজ্ঞতালব্ধ চিত্রকল্পটি নিহিত ছিল, জ্বরের আচ্ছন্নতায় সেটিই সে উচ্চারণ করেছে অবচেতনে। তার এই অবচেতন অবস্থায় অস্পষ্ট উচ্চারণের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ফটিকের অস্থিরচিত্ততা ও আসন্ন করুণ পরিণতিকেই নির্দেশ করেছেন।