“এরা সব এই পথে”-‘এরা’ বলতে কারা? ‘এই পথে’-র নির্দেশ কী? ২+৩
এরা হল: পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ দাশ-এর ‘তিমিরহননের গান’ কবিতায় উদ্ধৃত ‘এরা’ হল নিম্নবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি যারা জীবনের ঘূর্ণিপাকে পড়ে লঙ্গরখানার আনাচে-কানাচে ধুঁকতে থাকে আর ফুটপাথে নর্দমায় কীটপতঙ্গের মতো মরে যায়। কবির কথায় এরাই অন্নহীন, পরিচয়হীন, দিকচিহ্নহীন জীবনপথের সেই মানুষেরা, যাদের মৃত্যু হলেও খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। নর্দমার ধারে এদের নিরন্ন অনাহারক্লিষ্ট শুকিয়ে যাওয়া দেহ পড়ে থেকে কেবল মধ্যবিত্ত মনকে বিব্রত করে।
এই পথে-র নির্দেশ: ‘পথ’ শব্দটি যেন আলোচ্য কবিতায় জীবনপথের অভিমুখ নির্দেশ করে। আবার এও দেখা যায়- শহরের পথের দুপাশেই বিস্তৃত হয়ে থাকে ‘ফুটপাত’। গ্রাম থেকে আসা ক্ষুধার্ত, এতটুকু অন্নের জন্য ভিক্ষুক মানুষগুলি এই পথ ও পথের প্রান্তদেশকেই অবলম্বন করেছিল। – কিন্তু পথ মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিলেও, সাধারণভাবে উত্তরায়ণের মার্গ দর্শন করাতে চাইলেও আলোচ্য কবিতায় পথ শুধু মানুষকে মৃত্যুমুখীই করেছিল। এই পথে চলে কারও উত্তরণ তো হয়ইনি, বরং চরম আশাভঙ্গও হয়েছিল। কবি দেখিয়েছেন- পথে ও পথপ্রান্তে জড়ো হওয়া অজস্র ক্ষুধাকাতর মানুষ নগরে এসে ভেবেছিল- বাঁচবে, বেঁচে উঠবে, নগরের বিত্তশালী বাবুরা তাদের জীবনের সহায় হবে কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ফুটপাথ থেকে ‘দূর নিরুত্তর ফুটপাতে’ গিয়ে ‘এরা’ যেন জীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাদের আর গন্তব্যে পৌঁছোনো হয়নি, ব্যর্থ হয়েছে সমস্ত পথ।