গৌরবির নিজের জন্যে বড় কষ্ট হল।”—গৌরবির কষ্ট হল কেন

গৌরবির নিজের জন্যে বড় কষ্ট হল।”—গৌরবির কষ্ট হল কেন?

অথবা, “কে মুখ শলা করবে কে জানে!”- গৌরবির এই চিন্তাভাবনায় হতাশা কেন? 

অথবা, “এইসব সময়ে গৌরবির বড়ো কষ্ট হয়। ও রেললাইনের দিকে চেয়ে থাকে।”- গৌরবির কষ্টের কারণ কী? সে বেললাইনের দিকে চেয়ে থাকে কেন?

কষ্টের কারণ: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের প্রধান চরিত্র গৌরবি চিরদুঃখী এক বিধবা নারী। প্রতিবেশী, বান্ধবী আয়েছা বিবির অর্থাৎ হারার মা-র মৃত্যুর পর পুত্র-পরিত্যক্তা নিঃসঙ্গ গৌরবি নিজের জীবনের অন্তিম পরিণতির কথা চিন্তা করে কষ্ট পায়। হারার মাকে তার নিজের চেয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে হয় কারণ আয়েছা বিবি নিজের ঘরে মৃত্যুবরণ করেছে এবং সে তার পুত্র হারার হাতের মাটি পেয়েছে। কিন্তু গৌরবির কোথায় মৃত্যু হবে, কে তার মুখাগ্নি করবে সে তা জানে না। তাই সে মনে মনে ভাবে- “আমি বা কোথায় মরব, কে মুখ শলা করবে কে জানে।”। ছেলে নিবারণ মাকে আশ্রয় দেয়নি, দেখাশোনাও করে না। তাই গৌরবি নিজের ঘরেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবে কি না এবং ছেলের হাতের আগুন পাবে কি না সে বিষয়ে তার সংশয় আছে। তাই নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করেই কষ্ট পেয়েছে গৌরবি।

রেললাইনের দিকে চেয়ে থাকার কারণ: পুত্রস্নেহে কাতর গৌরবি তার কষ্টের সময়ে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাত্র কয়েকটা স্টেশন দূরে গৌরবির সমাজের লোকেরা জমি পেয়েছে। তার ছেলে নিবারণও সেখানে ঘর বানিয়ে বাস করছে। কিন্তু মাকে সে তার ঘরে থাকতে দেয়নি, নেয়নি ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। এক পায়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে, অসম্ভব দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হচ্ছে গৌরবিকে। স্বার্থপর, প্রতিহিংসাপরায়ণ নিবারণ তার নিজের বোনের বরকে বিয়েতে সাইকেল-ঘড়ি-টর্চ দেওয়ার রাগে মাকে আশ্রয় না দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। তাই মৃত্যুর পর আত্মজের হাতের আগুনটুকু পাওয়ার আশা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায়, কষ্টে গৌরবি উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে রেললাইনের দিকে-যে রেললাইন মাতৃহৃদয়কে নিয়ে যায় ছেলের কাছে।

Leave a Comment