‘ছুটি’ গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো

‘ছুটি’ গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, “দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।”-কার, কী কারণে গ্রামের কথা মনে পড়ত?

যার মনে পড়ত: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে গ্রামের কথা মনে পড়েছে গল্পের প্রধান চরিত্র তথা নায়ক ফটিকের।

কারণ: আলোচ্য গল্পে আমরা দেখি কিশোর ফটিক গ্রামের প্রকৃতিলগ্ন উদার-উন্মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে বড়ো হয়ে উঠেছে। কিন্তু পরিবারে সে মায়ের স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা থেকে আপাতভাবে বঞ্চিত থেকেছে। মায়ের তিরস্কার, ভর্ৎসনা আর বয়ঃসন্ধিকালে নিজের প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে না পারার কারণে সে তার মামার সঙ্গে কলকাতা যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় মামার বাড়িতে এসে মামির হৃদয়হীন আচরণে, মামাতো ভাইদের অবজ্ঞায়, শহরের চারদেয়ালের বন্দিজীবনে অল্পদিনেই সে হাঁফিয়ে উঠেছে।

একদিকে কিশোর মনের স্নেহবুভুক্ষা, অন্যদিকে মামাবাড়ির অপরিচিত পরিমণ্ডলে সীমাহীন অনাদর ফটিককে মর্মাহত করেছে। গ্রামজীবনের সেই উদার-উন্মুক্ত প্রকৃতিলগ্ন জীবনের প্রতি ফটিক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করেছে। শহরজীবনের অপরিসীম অবজ্ঞা আর নির্মমতা থেকে সেই মুহূর্তে তার ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়েছে নিজের সাম্রাজ্যে- যেখানে রয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মুক্ত আকাশ, সাঁতার কাটার সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, অকর্মণ্যভাবে ঘুরে বেড়ানোর সেই আদিগন্ত মাঠ, সীমাহীন নদীতীর। এমনকি ‘অত্যাচারিণী’, ‘অবিচারিণী’ মায়ের স্মৃতিও সেই ক্ষণে -তার বন্দিজীবনে একটুখানি মুক্তির বাতাস বয়ে এনেছে। রবীন্দ্রনাথ আলোচ্য গল্পে দেখিয়েছেন, প্রকৃতির সঙ্গে যার গভীর সংযোগ; প্রকৃতি যার সত্তার গঠনে বড়ো ভূমিকা পালন করেছে-তাকে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করলে পরিণতি মর্মান্তিক হতে পারে। মামাবাড়িতে এসে তাই ফটিকের অবস্থা হয়েছিল মাতৃহীন এক দুগ্রহ বৎসের মতো।

Leave a Comment