ছোটোগল্পের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণের মধ্য দিয়ে ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক, তা দেখাও

ছোটোগল্পের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণের মধ্য দিয়ে ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক, তা দেখাও। 

ছোটোগল্প: বাংলা ছোটোগল্পের সার্থক স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনিই প্রথম ‘ছোটোগল্প’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ছোটোগল্প কেবল ভাবাশ্রয়ী কল্পনামুখ্য নয়, বরং জীবননির্ভর এবং এতে রয়েছে খণ্ড কাহিনির ব্যবহার। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ছোটোগল্পের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল-

  • ছোটোগল্পের পরিসর ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র পরিসরেই ধরা থাকে জীবনের সমগ্রতা। অর্থাৎ এ হল বিন্দুতে সিধুদর্শন।
  • ছোটোগল্পের স্বল্প আয়তনে ঘটনা বা কাহিনির কোনো বাহুল্য থাকে না। চরিত্র থাকে গুটিকয়েক।
  • আদর্শ ছোটোগল্পে কেবল একটি ক্লাইম্যাক্স বা মহামুহূর্ত থাকে।
  • ছোটোগল্প পাঠকমনে একটি একক ধারণা তৈরি করে।
  • ছোটোগল্পে থাকে আরম্ভের তির্যক ভঙ্গি আর সমাপ্তির চমৎকারিত্ব। অর্থাৎ এক ধরনের জমাটি নাটকীয়তা লক্ষ করা যায়।
  • ছোটোগল্প শেষ হওয়ার পরেও একটা আক্ষেপ, অতৃপ্তি থেকে যায়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরণ-

"নাহি বর্ণনার ছটা    ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে     সাঙ্গ করি' মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।"

ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য নিরূপণে এই পঙ্ক্তিগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।

ছোটোগল্পরূপে সার্থকতা: মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ একটি স্বল্প পরিসরবিশিষ্ট কাহিনি। হারাকে কেন্দ্র করে গৌরবি, আয়েছা বিবি, যশি, মুকুন্দ প্রমুখ অল্প সংখ্যক চরিত্রের আবর্তন ও সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। গল্পের ঘটনাধারাও একমুখী পরিণামের দিকেই ধাবিত হয়েছে। গল্পে খুব বেশি পূর্ব কাহিনি বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়েনি, বিন্দুতেই সিধু দর্শন করিয়েছেন গল্পকার। গৌরবির সঙ্গে তার ছেলেমেয়ের সম্পর্ক, হারাকে আশ্রয় দেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামসমাজের ধর্মীয় সংস্কার ও সংকীর্ণতা, পরিশেষে হারা ও গৌরবির শহরে চলে যাওয়ার ঘটনায় গল্পের পরিণতি ও সমাপ্তি। কিন্তু গল্প শেষ হওয়ার পরও পাঠকের মনে হয় এরপর কী হল- হারা ও গৌরবি শহরে কীভাবে আছে, কী খাচ্ছে, কীভাবে চলছে তাদের জীবন- তা জানার কৌতূহল জন্মায় অর্থাৎ একটা অতৃপ্তির রেশ থেকে যায়। কয়েকটি চরিত্র আর বিশেষ ঘটনাধারার বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে গ্রামজীবনের সমাজবাস্তবতা ও হতদরিদ্র মানুষের জীবনযন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এই গল্পে। সুতরাং ‘হারুন সালেমের মাসি’ নিঃসন্দেহে একটি সার্থক ছোটাগল্প।

Leave a Comment