“নক্ষত্রের জ্যোৎস্নায় ঘুমাতে বা ম বে যেতে জানে।” ‘নক্ষত্রের জ্যোৎস্না’ কেমন? সেখানে ‘ঘুমাতে বা মরে যেতে’ জানার তাৎপর্য কী?
নক্ষত্রের জ্যোৎস্না: নক্ষত্র বলতে সাধারণত তারকা বা তারাকে বোঝায়। ব্রহ্মাণ্ডের এই বৃহৎ জ্যোতিপুঞ্জের মধ্যে সূর্যালোক এবং চাঁদের আলো পৃথিবী থেকে স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু নক্ষত্রের আলো হয়তো পৃথিবীতে এসে পড়লেও সেই আলো মিটমিটে, ম্রিয়মান। সূর্যালোক ও জ্যোৎস্না যেমন পৃথিবীকে আলোকিত করে, নক্ষত্রের আলো সেভাবে তীব্র হয়ে পৃথিবীর কাছে পৌঁছোয় না। তা কেবল অন্ধকারে মেশা ক্ষীণ আলোর আভাস মাত্র। নিজে আলোকিত হওয়ার ক্ষমতাটুকু থাকলেও পৃথিবীকে আলোকময় করে তোলার ক্ষমতা তার নেই।
ঘুমাতে বা মরে যেতে জানার তাৎপর্য: তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বাংলার বুকে শুরু হয়েছিল মৃত্যুর মিছিল। খাদ্যের প্রত্যাশায় গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল নর্দমা সংলগ্ন ফুটপাথ থেকে ওভারব্রিজ সর্বত্র। ভিক্ষাবৃত্তি করে অথবা লঙ্গরখানার খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে দিন গুজরান করা এই মানুষেরা বেশিদিন খিদের সঙ্গে লড়াই করতে পারেনি। অনাহারক্লীষ্ট শরীরে তারা খোলা আকাশের নীচে মৃত্যুঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল। তাদের জীবনসংগ্রামের কথাই এখানে বলতে চেয়েছেন কবি। তবে এই নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের মৃত্যুতে মধ্যবিত্ত নাগরিকের কিছুই এসে যায়নি। কবি মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিভূ হলেও সংবেদনশীল। তাই ‘জ্যোৎস্না’ বা ‘চন্দ্রালোক’ নিয়ে যে প্রচলিত রোমান্টিকতা, তাকে আঘাত করতে চেয়েছেন তিনি। অন্ধকার পথে খোলা আকাশের নীচে নক্ষত্রের মরা আলোয় এইসব নিরন্ন মানুষের মরণঘুমের বীভৎসতার ছবি এঁকে তিনি সমকালীন পরিস্থিতির বাস্তব ঘটনাগুলিকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন আলোচ্য কবিতায়।