“…নানাজনের কল্পনা ও অনুমানগুলি গুজব হয়ে উঠতে উঠতে মুষড়ে যায়।” -যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা হয়েছে তা আলোচনা করো

“…নানাজনের কল্পনা ও অনুমানগুলি গুজব হয়ে উঠতে উঠতে মুষড়ে যায়।” -যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা হয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটিতে কার্তিক মাসের মধ্যভাগে তিনদিনের ব্যবধানে গ্রামটিতে দুটি খুনের ঘটনা ঘটে যায়। মধ্যবয়সি জোয়ান বলাই চক্রবর্তীর অপমৃত্যু গ্রামের লোকদের কাছে অপ্রত্যাশিত না হলেও যোলো-সতেরো বছরের শুভ্রার খুন হওয়া সকলকে বিস্মিত করে। যে মেয়েটি সকলের চোখের সামনেই বেড়ে উঠেছে, সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মেয়েদের মতো বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে এবং মাসখানেক আগে বাবার বাড়িতে এসেছিল সন্তান প্রসব করার জন্য, তার এই পরিণতি গ্রামের মানুষদের ভাবনার বাইরে ছিল। মেয়েটির জীবনে এমন কোনো গোপন ঘটনা থাকতে পারে যা তাকে এই ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে, তা এমনকি পাশের বাড়ির মেয়েটির কাছেও অকল্পনীয় ছিল। গ্রামের লোকেরা ভাবতে থাকে তাদের চোখের আড়ালে ‘এই ভয়ানক অঘটনের ভূমিকা’ গড়ে উঠেছিল কিনা। দুটি খুনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ আছে কিনা তাও তাদের আলোচনার বিষয় হয়। যে গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছিল সেখানে বিশ-ত্রিশ বছর কেউ সেভাবে জখম পর্যন্ত হয়নি। তাই পরপর এই দুটি খুনের মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কারের জন্য সকলে অধীর হয়ে ওঠে। দুজন নিহতের একজন পুরুষ এবং একজন যুবতি নারী হওয়ায় জল্পনা আরও দানা বাঁধে। কিন্তু বলাই চক্রবর্তী কবে শুভ্রাকে শুধু চোখের দেখা দেখেছে তাও গ্রামের কেউ মনে করতে পারেনি। সে কারণে কল্পনা ও অনুমানে ‘বাস্তব সত্যের খাদ’ মেশানো সম্ভব হয় না, গুজবগুলি তাই বেড়ে ওঠার আগেই মুষড়ে পড়ে।

Leave a Comment