ফুটপাত থেকে দূর নিরুত্তর ফুটপাতে গিয়ে”- পঙক্তিটিতে প্রযুক্ত ‘ফুটপাত’ ও ‘দূর ফুটপাত – শব্দবন্ধ দুটির ব্যাখ্যা দাও। ৫
প্রসঙ্গ: বাংলায় হঠাৎ ঘনিয়ে ওঠা তেতাল্লিশের মন্বন্তর সামাজিক জনজীবনকে যেন মৃত্যুর ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনের আওতায় এনে দাঁড় করিয়ে দিল। শুধু খাদ্যের আশ্বাসে যে অনাহারক্লিষ্ট গ্রামীণ মানুষগুলি শহরের আদি -অন্তহীন ফুটপাথে এসে জড়ো হয়েছিল, কবি তাদের হতশ্রী ও দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থানকে চিহ্নিত করতেই ফুটপাথের প্রসঙ্গ এনেছেন।
ফুটপাত ও দূর নিরুত্তর ফুটপাত: মূলত শহুরে পথের দুপাশে পথিকজনের পায়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট বাঁধানো রাস্তাকে ফুটপাথ বলা যেতে পারে। কবিতায় এই পঙ্ক্তিটিতে ‘ফুটপাত’ শব্দটি সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। মন্বন্তরে মৃতপ্রায়, বিপন্ন অনাহারী মানুষেরা নিছক খাদ্যের সন্ধানে এসে জড়ো হয়েছিল শহরের ফুটপাথে। তাদের এই অবস্থান শহুরে মধ্যবিত্ত বাবুদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। তারা ভাবে- এরা যেন শহরের নিশ্চিন্ত আরামদায়ক জীবনে এসে জুড়ে বসা কোনো উটকো ঝামেলা। তাদের স্বতঃসিদ্ধ, সুখী জীবনের পাশে দুমুঠো অন্ন ও ফ্যান চাওয়ার উচ্চকিত আওয়াজ তাই নিঃসন্দেহে বিব্রত করেছিল তাদের। ফুটপাথে পড়ে থাকা মানুষগুলো করুণার দানস্বরূপ এতটুকু ভাত বা ফ্যান পেলেই, সেটুকুকে আশ্চর্য প্রাপ্তি বলে মনে করেছে আর সেই সামান্য ভাতটুকুও না জুটলে তারা সরে সরে গিয়েছে আরও দূরের কোনো ফুটপাথে একটু অন্নের আশায়। কিন্তু স্থান পরিবর্তন করে দূরের ফুটপাথে গেলে সেই স্থানও খাদ্যের প্রার্থনায় বেশিরভাগ সময়ই নিরুত্তর থেকেছে। কারও থেকে কোনোপ্রকার সদুত্তর না পেয়ে অনেকক্ষেত্রে ফুটপাথেই চিরঘুমে ঢলে পড়েছে তারা। তাদের সব জীবনযন্ত্রণার অবসান ঘটেছে ফুটপাথেই। কিন্তু, এই নির্মম ঘটনা দিনের পর দিন প্রত্যক্ষ করেও চুপ থেকেছে শহুরে ফুটপাথ, সোচ্চার হয়নি কোনো নাগরিক- তাই কবির এই হতাশাময় উক্তি।