“বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।”-বিধবাটি কে এবং তাঁর প্রস্তাবটি কী ছিল? তিনি এ প্রস্তাবে সম্মত হলেন কেন?
বিধবার পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ছুটি’ গল্পে কিশোর ফটিকের মানসলোকের নানান বৈচিত্র্যকে মনস্তাত্ত্বিকের মতো তুলে ধরেছেন। এই গল্পে বিধবাটি হলেন সেই কিশোর ফটিকের মা। অকাল বিধবা এই রমণী দুই সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করতেন।
প্রস্তাব: ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর ছিল তার বোনের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ ও ঐকান্তিক ভালোবাসা। তাই দুর্মূল্যের বাজারে নিজের পরিবারে তিনটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও ভাগনে ফটিককে কলকাতায় লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবেন বলে বোনের কাছে প্রস্তাব দেন তিনি।
প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কারণ: বিশ্বম্ভরবাবু বোনের প্রতি যেমন ছিলেন স্নেহপরায়ণ তেমনই ছিলেন একজন সংবেদনশীল মানুষ। তিনি একসময় পশ্চিমে কর্মে লিপ্ত ছিলেন। ফলে অকাল বিধবা বোনের প্রতি কোনো কর্তব্যই পালন করতে পারেননি। তাই দেশে ফিরেই সেই কর্তব্যপালনের জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বোনের বাড়িতে আসেন। ফটিকদের বাড়িতে কয়েকটা দিন কাটানোর পর অবশেষে ফিরে যাওয়ার দু-একদিন আগে বোনের দুই সন্তান তথা তাঁর দুই ভাগনের পড়াশোনা ও মানসিক উন্নতিবিধানের সংবাদ নেন। তিনি বোনের কাছে জানতে পারেন যে, মাখন সুশীল স্বভাববিশিষ্ট, বিদ্যানুরাগী ও মায়ের অনুগত সন্তান। অপরদিকে, ফটিক অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল ও বিদ্যাভ্যাসে অমনোযোগী এক দুরন্ত কিশোর। ফটিকের মা তার প্রতি ছিলেন অত্যন্ত বুষ্ট। তাই দাদার কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন-“ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।” বৈধব্য জীবনের শূন্যতা এবং পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে তাঁর দৈন্যদশা ছিল প্রবল। ফলে বিধবার পক্ষে ফটিকের মতো দুরন্ত, পাঠে অমনোযোগী ও অকর্মণ্য ছেলেকে প্রতিপালন ও পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও ফটিকের মায়ের আশঙ্কা ছিল যে, তার কনিষ্ঠ সন্তান মাখনকে ফটিক শারীরিকভাবে আঘাত করে বড়ো একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই সন্তানপালনে অক্ষমতার কথা ভেবে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতোই ফটিকের মা, বিশ্বম্ভরবাবুর প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন।