মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে চিত্রিত নিবারণ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো

মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে চিত্রিত নিবারণ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো। 

নিবারণের ঈর্ষা: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের প্রধান চরিত্র গৌরবি, তার ছেলে হল নিবারণ। নিবারণ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজের তৈরি বাড়িতে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে। বিধবা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সে নেয়নি, এমনকি নিজের বাড়িতে আশ্রয়ও দেয়নি মাকে। একমাত্র বোন পুটির বিয়েতে ঘর তৈরির টাকা ভেঙে বাবা জামাইকে ঘড়ি-টর্চ-সাইকেল দেওয়ায় নিবারণের হিংসা ও রাগ। গৌরবি সেইসময় বলেছিল, বয়সকালে মেয়েই তাদের দেখভাল করবে। কিন্তু পুঁটির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সেখানেও গৌরবির ঠাঁই হয়নি। অথচ নিবারণের ক্ষমতা থাকলেও সে মাকে তার কাছে রাখেনি। বোনের বরকে বিয়েতে দেওয়া সাইকেল-ঘড়ির প্রতি নিবারণের ঈর্ষা তাকে মায়ের প্রতিও বিমুখ করে তুলেছে।

মানসিক সংকীর্ণতা: নিবারণের ঘরে দেড়শো টাকা দামের রেডিয়ো বাজে, অথচ একটা গাই-গোরু কিনে পালন করার জন্য গৌরবি একশো টাকা চাইলে সে দেয় না। সদ্য মাতৃহারা অনাথ বালক হারাকে নিয়ে গৌরবি নিবারণের কাছে আশ্রয় চাইতে গেলে মুসলমান বালককে আশ্রয় দেওয়ার আস্পর্ধা দেখে মাকে কটুকথা বলে নিবারণ। গৌরবিকে শত্রু বলে গণ্য করে সে। নিবারণ আবার সুবিধাবাদীও বটে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর দেখাশোনার জন্যই নিবারণ মাকে রাখতে রাজি হয়। কিন্তু হারাকে ত্যাগ করার শর্ত দেয় গৌরবিকে। স্বার্থপরতা, মায়ের প্রতি অবমাননা, ধর্মীয় সংস্কারাচ্ছন্নতা, ছোট্ট হারার প্রতি নিষ্ঠুর মনোভাব নিবারণের সংকীর্ণ মনেরই পরিচায়ক।

প্রতিহিংসাপরায়ণতা: গৌরবির বর্তমান আশ্রয়দাতা ভাইপো মুকুন্দকেও নিবারণ মায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করতে চেয়েছে। মায়ের শেষ আশ্রয় ও অবলম্বনটুকু কেড়ে নিয়ে নিবারণ তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চেয়েছে। ছেলেবেলার রাগ পুষে রেখে প্রবল প্রতিহিংসায় অমানবিক এক কুপুত্র হয়ে উঠেছে গল্পের নিবারণ।

Leave a Comment