“সে যেন বাইরের কোনো বিশিষ্ট অভ্যাগত…।” -কে, কার সম্পর্কে এ কথা ভেবেছে? তার যে মনোভাবের প্রকাশ এখানে ঘটেছে আলোচনা করো

“সে যেন বাইরের কোনো বিশিষ্ট অভ্যাগত…।” -কে, কার সম্পর্কে এ কথা ভেবেছে? তার যে মনোভাবের প্রকাশ এখানে ঘটেছে আলোচনা করো।

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের উল্লিখিত অংশে ধীরেন তার নিজের সম্পর্কেই এরকম ভেবেছিল।

বোন শুভ্রার মৃত্যু দাদা হিসেবে ধীরেনকে স্বাভাবিকভাবেই বিচলিত করেছিল। তালকাঠের টুকরো দিয়ে বাড়ির পিছনের ডোবার ঘাটের ধাপগুলি ধীরেন সাত মাসের গর্ভবর্তী শুভ্রার ওঠানামার সুবিধার জন্যই তৈরি করে দিয়েছিল। সেখানেই খুন হয়েছিল শুভ্রা। কার দ্বারা কেন শুভ্রা খুন হয়েছিল, কীভাবে কোন্দিক থেকে খুনি এসেছিল-এইসব ভাবনা ধীরেনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তার উপরে বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হয় শুভ্রার খুনের সঙ্গে বলাই চক্রবর্তীর সম্পর্কের গুজবে। স্ত্রী শান্তি সেই বিষয় উপস্থাপন করতে চাইলে সে প্রবল বিরক্তি প্রকাশ করে। স্কুলে যাওয়ার পথে যাদের সঙ্গে দেখা হল তারা মুখে কিছু না বললেও সে উপলব্ধি করে যে, তাদের তাকানোর ভঙ্গিতে যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তারা ধীরেনের মনোভাব জানতে চাইছে। পুরোহিত তাকে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে দোষমোচনের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকর্ম বিষয়ে পরামর্শ দিলেন, উপদেশ দিলেন স্কুল থেকে ফেরার সময় বাড়ির সকলের জন্য মাদুলি নিয় যেতে। এবং স্কুলে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা আরও অদ্ভুত হল। তার ‘সাত বছরের অভ্যস্ত অস্তিত্ব’-এর সঙ্গে কেউ যেন তাকে মেলাতে পারছে না। ছাত্ররা ক্লাসে হয় আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে, অথবা নিজেদের মধ্যে নীচুস্বরে কথাবার্তা বলছে। নিজেকে ধীরেনের মনে হয় সে যেন স্কুলে কোনো অভ্যাগত, স্কুল পরিদর্শন করতে এসেছে।

Leave a Comment