হারুন সালেমের মাসি’ গল্প অবলম্বনে হারা চরিত্রটির পরিচয় দাও

হারুন সালেমের মাসি’ গল্প অবলম্বনে হারা চরিত্রটির পরিচয় দাও। 

বুদ্ধিমান ও সংযত: ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের ঘটনাধারা আবর্তিত হয়েছে মূলত বছর সাতেকের হারাকে কেন্দ্র করেই- যার প্রকৃত নাম হারুন সালেম। রোগা ছেলেটার কথা সড়োগড়ো নয়- আবার পেটে খিদের আগুন ও অপুষ্টিতে ভোগা হারা নির্বোধও নয়। তাই মাকে কোনোরকম নড়াচড়া করতে না দেখে পরিস্থিতি বুঝে সে আগে এসেছে মাসি গৌরবির কাছেই এবং আড়ষ্ট উচ্চারণে বলেছে, “মা ললে না মাসি!” অজগাঁয়ে গৌরবি মাসিই যে তাদের সুখদুঃখের একমাত্র সাথি সে কথা ছোট্ট হারা বুঝে গিয়েছে আগেভাগেই। পাশাপাশি দেখা যায়, সদ্য মাতৃহারা ছেলেটা শোকে-দুঃখে বিলাপ না করে মাসির কথামতো কাজ করেছে। বয়স অল্প হলেও জীবন অভিজ্ঞতায় বিজ্ঞ হারা মায়ের মৃত্যুর পর যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে মাসির কাছে এসে উঠেছে। বয়স আন্দাজে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও সংযত।

অনুগত: মায়ের শিখিয়ে যাওয়া “মাসির পা ধরে পড়ে থাকিস”- এই শেষ কথাগুলি হারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। গৌরবির সব নির্দেশ মান্য করতে দেখা গিয়েছে হারাকে। গৌরবির নির্দেশে মায়ের কবরে মাটি দেওয়া, দূরসম্পর্কের কাকার কাছে আশ্রয় নিতে যাওয়া এমনকি গৌরবির ভর্ৎসনা শুনে নিজের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েও পুনরায় মাসির কাছেই ফিরেছে সে। মাসির হাত ধরে নিরাপদে অচেনা শহরের পথে নির্দ্বিধায় পাড়ি দিয়েছে হারা। গৌরবির প্রতি তার আনুগত্যের এগুলিই প্রমাণ।

বাস্তববোধসম্পন্ন: হারা শুধুই বাধ্য বা অনুগত ছিল না- মানুষ চেনার ক্ষমতাও তার সেই স্বল্প বয়সেই হয়ে গিয়েছিল। খিদে সহ্য করতে করতেই সে একেবারে বিজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। বাবার মৃত্যুর সময় সে নিজের সমাজের লোকের দুর্ব্যবহার দেখেছে- মা মরতেই কাকার স্বার্থপরতা উপলব্ধি করেছে। তাই ছোট্ট হারা নিজের সমাজের কাছে আশ্রয় খুঁজতে যায়নি। গৌরবি মাসির কাছে থাকলে সে প্রাণে বাঁচবে- এই বাস্তব শিক্ষাই হারা চরিত্রের অর্জন।

মাসির প্রতি দায়িত্ববান: খোঁড়া মাসিকে সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল সে। ঘর থেকে সে মেটে আলু এনে দিয়েছে মাসিকে। থানকুনি শাক তুলেছে মাসির সঙ্গে, দোকানে ফাইফরমাস খেটে মাসির ঘরে লক্ষো জ্বালানোর কেরোসিন তেল জোগাড় করেছে। মাসির সঙ্গে মিয়োনো চালভাজা চিবিয়েছে।

মায়ের প্রতি অনুভূতিপ্রবণ: হারার ভবিষ্যতের কথা ভেবে গৌরবি একসময় উন্মাদের মতো হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে হারাকে আগলে রাখার অপরাধে নিজের আশ্রয় হারানোর ভয়ে গৌরবি হারাকে দূর দূর করে তাড়িয়েও দিয়েছে। মাসির তাড়া খেয়ে একলা হারা নিজের ঘরের মেঝেতে এসে শুয়েছে- ঘুমের ঘোরে মাকে দেখেছে। মনে হয়েছে এখনই মা এসে তার জন্য রাঁধতে বসবে- সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। মাতৃহীন হারার বুকের ভিতর মায়ের জন্য জমানো কান্না ঢেউ-এরমতো আছড়ে পড়েছে। ঘুমের মধ্যে সে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। অনাথ হারার এই বুকফাটা যন্ত্রণা ও মাতৃস্নেহবঞ্চিত এক শিশুর দুর্বলতা সত্যিই মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো।

মাসির প্রতি আস্থাবান: গৌরবি হারাকে নিয়ে শহরে পালানোর কথা বললে তখনও সে মাসির কথা ভেবেছে- খোঁড়া মাসি শহরের ব্যস্ততম রাজপথে কেমন করে তাল রাখবে। তবুও সহজসরল বিশ্বাসে আর মাসির প্রতি অগাধ ভরসা নিয়ে হারা গ্রাম ছেড়েছে। হারা মানুষের প্রতি অর্থাৎ মানবতার প্রতি গভীর আস্থায় মাসির হাত ধরে চেনা জীবন ছেড়ে অচেনা শহরের পথে পা বাড়িয়েছে-বলা বাহুল্য মাসিই তার কাছে মা হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment