“হেমন্তের প্রান্তরের তারার আলোক।”- প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো। ৫
প্রসঙ্গ: মানুষের জীবনে যে দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছিল বিংশ শতাব্দীর চারের দশকে, সেই দুঃসময়ের কথাই বর্ণনা করতে গিয়ে কবি আলোচ্য পঙ্ক্তিটির ব্যবহার করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন একদা যেসব রীতি প্রগতির পথে মানুষকে চালিত করেছিল সেসব স্মরণীয় উত্তরাধিকার আজ মানুষ ভুলতে বসেছে। সেইসব ঐতিহ্য আজ মৃতের চোখের মতো নিষ্প্রভদৃষ্টি তুলে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সেই আকাশে আলো নেই, রয়েছে শুধু মিটমিটে তারার অস্পষ্টতা।
উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য: হেমন্ত হল শীতের পূর্ববর্তী ঋতু যা কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে অবস্থান করে। এইসময় কৃষিজমি থেকে ফসল কেটে নেওয়া হয়। রাতের অন্ধকারে সেই উন্মুক্ত প্রান্তরে কেবল থাকে কুয়াশা আর সেই কুয়াশায় আচ্ছন্ন আকাশে নক্ষত্রের স্নান আলো। এ ছাড়া হেমন্ত মানেই আমরা যেমন প্রকৃতির শুষ্কতা, পাতাঝরার দিনের আগাম আভাস পাই, ঠিক সেরকমভাবেই আমাদের সভ্যতাও যেন সংকটের মুখে। মানুষের শুভবুদ্ধি, সুচেতনা সবই যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন। কুয়াশাঘন হেমন্ত-প্রান্তরে যেমন তারার আলো ক্ষীণ তেমনই মানুষও যেন যাবতীয় জ্ঞান, চেতনা, তার উত্তরাধিকার, ঐতিহ্যবোধকে হারিয়ে ‘নিরালোক’ অর্থাৎ অন্ধকারে অবস্থান করছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় হেমন্ত ঋতুর কথা বারবার এসেছে মানুষের মনের বিষাদ, উর্বর জমি থেকে ফসল কেটে নেওয়ার পরবর্তী শূন্যতা, কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকারকে বোঝাতে। তা ছাড়া এই ঋতুতেই পূর্বপুরুষের উদ্দেশে আকাশপ্রদীপ জ্বালানো হয়। কবি আলোচ্য কবিতাতেও আমাদের স্মরণীয় উত্তরাধিকার থেকে শুরু করে সমসাময়িক অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থাকে চিত্রিত করতে হেমন্ত ঋতুর অনুষঙ্গ এনেছেন।