ঈশ্বরের জিনিস তো! শাকে-পাতায় দোষ নেই।”- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
অথবা, “ঈশ্বরের জিনিস তো! শাকে-পাতায় দোষ নেই।”-শাকপাতাকে কেন ‘ঈশ্বরের জিনিস’ বলা হয়েছে? এসব জিনিস দোষমুক্ত কেন?
ঈশ্বরের জিনিস: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে গৌরবির মনে হয়েছে শাকপাতা ঈশ্বরের জিনিস। কারণ এগুলি প্রকৃতির দান আর বিশ্বপ্রকৃতি তো ঈশ্বরেরই সৃষ্টি। গৌরবি দীনদুঃখী সাধারণ এক বিধবা নারী। তার গ্রাম্য সরলতায় ধর্মীয় সংস্কার ও ঈশ্বরবিশ্বাস থাকা স্বাভাবিক। সেই বিশ্বাস থেকে তার মনে হয়েছে খালপাড়ে বা বিলের ধারে আপনাআপনি গজিয়ে ওঠা থানকুনি পাতা, বেলপাতা, ঢেঁকিশাক, দূর্বাঘাস, যজ্ঞডুমুরের ডাল ইত্যাদি উদ্ভিদ ঈশ্বরের জিনিস। এমনকি জলাশয়ে যে গুগলি পাওয়া যায় সেও ঈশ্বরেরই দান।
দোষমুক্তির কারণ: এইসব শাকপাতা ও গুগলি যা গৌরবি ও আয়েছা বিবি সংগ্রহ করে এবং যেগুলি তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন- সেই ‘ঈশ্বরের জিনিস’ ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত। গৌরবির এক পা খোঁড়া বলে শাকপাতা তোলার কাজে সে আয়েছা বিবির উপর নির্ভরশীল। যেহেতু আয়েছা মুসলমান তাই তার হাত থেকে শাকপাতা নিতে হিন্দু গৌরবির বাধো বাধো ঠেকত কারণ দূর্বা, বেলপাতা পুজো ও শুভ কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এসব জিনিস মানুষের চাষ করা নয়, এমনকি কারও ব্যক্তিগত জমিতেও জন্মায় না। তাই গৌরবি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ছলে মনে করত ঈশ্বরের জিনিস শাকপাতা বিধর্মীর স্পর্শদোষ থেকে মুক্ত।