“সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু” -‘সেই সব রীতি’ বলতে কোন্ রীতির কথা বলা হয়েছে? তাকে ‘মৃতের চোখের মতো’-ই বা বলা হয়েছে কেন

“সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু” -‘সেই সব রীতি’ বলতে কোন্ রীতির কথা বলা হয়েছে? তাকে ‘মৃতের চোখের মতো’-ই বা বলা হয়েছে কেন? ২+৩

যে রীতি: জীবনে চলার পথে মানুষ যা কিছু অর্জন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। একে অপরকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে মানুষ গড়ে তুলেছিলো আত্মীয়তার বন্ধন ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ হয়ে উঠেছে আত্মকেন্দ্রিক ও সুবিধাবাদী, ক্ষণিকের প্রাপ্তির মোহে অন্ধ মানুষ অতীতের সেইসব আন্তরিক রীতি ভুলতে বসেছে। ফলে মানুষে-মানুষে সম্প্রীতি, স্বার্থহীন ভালোবাসার যে রীতি, যে স্মরণীয় উত্তরাধিকার তা ক্রমশ বিনষ্ট হয়ে চলেছে।

মৃতের চোখের মতো বলার কারণ: একদা যেসব অভ্যাস মানুষকে প্রগতির পথে চালিত করেছিল, মানুষের দৃষ্টিকে করেছিল আকাশের মতো উদার- সেইসব গৌরবময় সংস্কার, সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আজ মানুষের মনের অন্ধকারের কাছে পরাজিত। ফলে মানবতা বিপন্নতার সম্মুখীন, বিশ্বশান্তি প্রশ্নচিহ্নের মুখে। যে আকাশের মতো দৃষ্টির প্রসারতা নিয়ে মানুষ মানুষকে আপন করে নিত, সেই দৃষ্টিতে বর্তমানে কেবলই সংকীর্ণতার আঁধার দেখা যায়। কবি মানুষের এই ভাবলেশহীন নির্বিকার দৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করেছেন মৃতের চোখের। কেন-না, বিংশ শতকের বাংলা প্রত্যক্ষ করেছিল দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দুটো মহাযুদ্ধ, শরণার্থী সমস্যা, বেকারত্ব। অথচ এত কিছু দেখার পরেও মধ্যবিত্ত নাগরিকের দৃষ্টিতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ধরা পড়েনি অনুভূতির কোনো বিশেষ প্রতিফলন। তাই কবি জীবনানন্দ দাশ মধ্যবিত্ত নাগরিকের এই উদাসীন, আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিকে ‘মৃতের চোখের মতো’ বলেছেন।

Leave a Comment