আরো বেশি কালো-কালো ছায়া/লঙ্গরখানার অন্ন খেয়ে-কালো-কালো ছায়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তারা লঙ্গরখানার অন্ন খায় কেন

আরো বেশি কালো-কালো ছায়া/লঙ্গরখানার অন্ন খেয়ে-কালো-কালো ছায়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তারা লঙ্গরখানার অন্ন খায় কেন?

কালো-কালো ছায়া: সময়টা ১৯৪৩, বাংলার বুকে ঘনিয়ে এল মন্বন্তরের ছায়া; সেই মন্বন্তরের মাঝে খাবারের সন্ধানে গ্রাম থেকে মানুষ উঠে এল শহরে। শহরে বসবাসকারী উচ্চবিত্ত নাগরিক কালোবাজারির মাধ্যমে মুনাফা লুটতে লাগল। আর মধ্যবিত্ত নাগরিক এরকম আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে আত্মগ্লানিতে ফেটে না পড়ে বিরক্ত হল। কারণ মন্বন্তরক্লীষ্ট সময়ে তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না, ফলে স্বভাবতই উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণি মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্বযুদ্ধ, বেকারত্ব নিয়ে চিন্তিত ও বিষণ্ণ ছিল। কিন্তু তাদের মনের এই বিষন্নতার ছায়ার থেকেও বৃহত্তর ক্ষুধার আঁধার ঘনিয়ে এসেছিল বাংলার বুকে যা তাদের মৃতের মতো চোখে ধরা পড়েনি। খিদের জ্বালায় শহরে চলে আসা মানুষের ক্ষীণ চেহারা দেখে মানুষ নয়, মানুষের কালো ছায়া বলে ভ্রম হয়েছিল কবির, সেকথাই তিনি কবিতার উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটিতে প্রকাশ করেছেন।

লজ্জারখানা প্রসঙ্গ: লঙ্গরখানা হল দুর্গত মানুষদের বিনামূল্যে খাওয়ার স্থান। সাধারণত সরকারি বা কখনও বেসরকারি উদ্যোগে এখানে খাদ্য বিতরণ করা হয়। তেতাল্লিশের মন্বন্তরের সময় বাংলার বুকে প্রচুর লঙ্গরখানা খোলা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা পর্যাপ্ত ছিল না। দেশের উৎপাদক শ্রেণি অর্থাৎ কৃষিজীবি, শ্রমজীবি মানুষের উপরেই এই মন্বন্তরের সর্বাধিক প্রভাব পড়েছিল। একটু ভাত, নিদেনপক্ষে সামান্য ফ্যানের প্রত্যাশায় তারা লাইন করে দাঁড়িয়েছিল লঙ্গরখানার সামনে- যাদের অস্থিসর্বস্ব চেহারা দেখে কবির মনে হয়েছে তারা মানুষ নয়, সমাজের বুকে যে অবক্ষয়ের অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে এরা যেন তার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

Leave a Comment