“মধ্যবিত্ত মানুষের বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে’- মধ্যবিত্ত কারা? ‘বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

“মধ্যবিত্ত মানুষের বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে’- মধ্যবিত্ত কারা? ‘বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ২+৩

মধ্যবিত্ত: আর্থিক দিক থেকে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যবর্তী অবস্থাযুক্ত শ্রেণিকে ‘মধ্যবিত্ত’ বলা হয়। সামাজিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি এদের কিছু মানসিক বৈশিষ্ট্যও থাকে। উচ্চবিত্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতিহীনতা, পলায়নবাদী মনোভাব ও এই শ্রেণির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কাজেই এই বৈশিষ্ট্যগুলির সাপেক্ষে বিচার করতে গেলে ‘মধ্যবিত্ত মানসিকতা’ কথাটির অর্থ বুঝতে পারা যায়। এই মানসিকতা যে-কোনো উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তেরও থাকতে পারে, আবার আর্থিকভাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিটি ব্যক্তির মানসিকতা একরকম নাও হতে পারে।

বেদনার নিরাশার হিসেব: তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে যখন গ্রামীণ, নিরন্ন মানুষ মহানগরীর পথেঘাটে খিদের জ্বালায় মৃত্যুর মুখে পতিত ৪ হয়েছিল তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজ। তারা নিজেদের আয়-ব্যয়, যুদ্ধের বাজারে ক্ষয়ক্ষতি, ব্রিটিশ সরকারের চাপানো করের বোঝা, সর্বোপরি নিজের ভালো থাকার চিন্তায় মশগুল ছিল। কবির মতে তাদের এই হিসাব-কষা জীবনের নিরাশা, বেদনার পরিমাণকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল মন্বন্তরে ক্ষুধাকাতর মানুষের সংখ্যা তথা মৃতের সংখ্যা। তবুও তা মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষগুলোকে ব্যস্ত করে তোলেনি। সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণি এবং শোষিত শ্রেণির মধ্যে বিভাজনের যে দেয়াল তা ক্রমশ উচ্চ থেকে উচ্চতর হয়, নক্ষত্রের আলোর নীচে মৃত্যু ঘটে শত শত বুভুক্ষু মানুষের যারা একদিন বাংলার মাটিতে ফসল ফলিয়েছিল। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই বিপর্যয়ে মানবিকতার যে ক্ষতি হয়েছিল তার হিসাব কবি মেলাতে পারেননি। আলোচ্য কবিতার ছত্রে ছত্রে তাই কবি জীবনানন্দ দাশের আত্মগ্লানি, আশঙ্কা, হতাশা, ধিক্কার ব্যক্ত হয়েছে।

Leave a Comment