“নর্দমার থেকে শূন্য ওভারব্রিজে উঠে নর্দমায় নেমে-” পাঠ্য কবিতায় নর্দমা এবং ওভারব্রিজের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

“নর্দমার থেকে শূন্য ওভারব্রিজে উঠে নর্দমায় নেমে-” পাঠ্য কবিতায় নর্দমা এবং ওভারব্রিজের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৩+২

নর্দমার প্রসঙ্গ: নর্দমা হল সেই সংকীর্ণ, কলুষিত জায়গা যেখানে ময়লা-আবর্জনা এসে জমা হয়ে নোংরা, কালো জলের তোড়ে একসময় ভেসে যায়। তেতাল্লিশের আকালে গ্রামের মানুষ যখন শহরে আসে খাদ্য এবং বাসস্থানের আশায় তখন স্বাভাবিকভাবেই স্বার্থপর নাগরিক সভ্যতা তাদের আপন করে নেয়নি। ফলে খাদ্যের জন্য তাদের ভিক্ষা, লঙ্গরখানার খাবার বা সরকারি ক্যাম্পের উপর ভরসা করতে হয়েছিল। নিতান্তই স্বল্প সেই আয়োজনে তাদের চাহিদা পূরণ হয়নি। নির্মম মহানগরী নর্দমার পার্শ্বস্থ স্থানে খোলা আকাশের নীচে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সেখানে বসবাস করার পাশাপাশি নর্দমাতেই তারা ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্টের সন্ধান চালাত। তাদের বেঁচে থাকার ধরন যেন নর্দমার কীটের মতোই হয়ে গিয়েছিল। মন্বন্তরক্লীষ্ট সময়ে মানুষের দুরবস্থাকে প্রকাশ করতেই কবি এই কবিতায় নর্দমার প্রসঙ্গ এনেছেন।

ওভারব্রিজের তাৎপর্য: মন্বন্তরের পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ জীবনের পথ হারিয়ে সামান্য খাদ্যের আশায় শহরের ফুটপাথে, নর্দমাসংলগ্ন স্থানে, ওভারব্রিজের উপরে জড়ো হয়েছিল। অনাহারে মৃত মানুষের লাশ ডিঙিয়ে পথচলতি মানুষ এগিয়ে যেত তার গন্তব্যের দিকে। আসলে ফুটপাথ ও নর্দমা থেকে ওভারব্রিজের উচ্চতা অনেকটাই। এ যেন নিম্নবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে থাকা ব্যবধানের সূচক। তা ছাড়া মধ্যবিত্ত-উচ্চাকাঙ্খী মন পৌঁছোতে চায় একটু বেশি ভালো থাকার, স্বচ্ছন্দে থাকার মতো উচ্চবিত্ত অবস্থায়- কিন্তু তার এই আকাশকুসুম ভাবনা এই দুর্ভিক্ষকালে অচিরেই নিরাশার অন্ধকারে ডুবে যায়। এসময়ে গ্রাম থেকে আসা শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত মানুষ ও মধ্যবিত্ত ভদ্র-সাধারণ উভয় পক্ষেরই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। তাই মধ্যবিত্তের ভাবনার এই পতন যেন সেই ওভারব্রিজ থেকে পুনরায় নর্দমায় নেমে আসার মতোই। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মনের সংকীর্ণতা ও ক্লেদাক্ততা যেন নর্দমার সঙ্গেই তুলনীয়। তাই এই কবিতায় ওভারব্রিজ ও নর্দমার একাধিক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে যা কবির সমাজভাবনাকে প্রকাশ করেছে।

Leave a Comment