“ওরা সব ওই পথে- তবু”- ‘ওরা’ বলতে কারা? ‘ওই পথে বলার পর পঙ্ক্তিতে ‘তবু শব্দটি কেন এসেছে

“ওরা সব ওই পথে- তবু”- ‘ওরা’ বলতে কারা? ‘ওই পথে বলার পর পঙ্ক্তিতে ‘তবু শব্দটি কেন এসেছে? ২+৩

ওরা যারা: আলোচ্য কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ ‘ওরা’ বলতে সমাজের সুবিধাভোগী, ক্ষমতালিঙ্গু শ্রেণির কথা বুঝিয়েছেন। নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য তারা সাধারণ মানুষের চরম ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না। তেতাল্লিশের মন্বন্তরও এইসব মানুষের লালসাজাত কালোবাজারির প্রধানতম ফলাফল যা কেড়ে নিয়েছিল হাজার-হাজার মানুষের মুখের গ্রাস শুধু নয়, প্রাণও। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণিও এদের কাছাকাছি থাকতে চায়, এরা উচ্চবিত্তের ক্ষমতাবলয়ের পরিধি ছুঁয়ে থাকে আবার বলিপ্রদত্ত, নিপীড়িত সাধারণ মানুষের জন্য বিমর্ষ হয়, ছদ্ম প্রতিবাদ জানায় রাজপথে অথচ সেখানেই পড়ে থাকা অনাহারক্লীষ্ট মৃতদেহকে সন্তর্পণে ডিঙিয়ে যায়, এড়িয়ে যায় তাদের ক্ষুধার আর্তনাদকে।

তবু শব্দের প্রয়োগ: ‘তবু’ শব্দটি আসলে কবিমনের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতীক। এই দ্বন্দ্ব বিশ্বাসের সঙ্গে অবিশ্বাসের, দ্বিধাগ্রস্ততার। ‘ওই পথে’ বলতে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির পথ আর ‘এই পথে’-র অর্থ নিম্নবিত্ত, নির্যাতিত মানুষের পথ- এই দুই পথের মাঝামাঝি মধ্যবিত্ত শ্রেণির পথের অবস্থান। এই শ্রেণির মধ্যে ক্ষমতার খিদে আছে আবার মন্বন্তরগ্রস্ত মরণাপন্ন মানুষদের জন্য একপ্রকার লোকদেখানো বিমর্ষতাও আছে। তবে সবকিছুর ঊর্দ্ধে আছে তার আত্মকেন্দ্রিকতা, সবসময় সে নিজেকে নিয়েই ভাবতে ব্যস্ত। অন্যের দুরবস্থার প্রতি তার কোনো সহানুভূতি নেই, নেই কোনো সমাজসংস্কারের আকাঙ্খা। কিন্তু তবু কবি আশা করেছেন যে এই শ্রেণি একদিন দিন বদলের ডাক দেবে কারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণি চিন্তাশীল, একদিন না একদিন তারা উপলব্ধি করবেই যে সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে- তারা সভ্যতার অগ্রদূত, তারা আলোর পথযাত্রী। আত্মকেন্দ্রিকতার অন্ধকারের পূজারী তারা নয়। কবি আসলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেকার চিরাচরিত দ্বন্দ্ব আবার চরম হতাশার সঙ্গে আশাবাদের কথা শোনাতেই ‘তবু’ শব্দটির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

Leave a Comment