আরোহ অনুমানের বিশেষ লক্ষণগুলি কী কী? ব্যাখ্যা করো।
আরোহ অনুমানকে অন্যান্য অনুমান থেকে পৃথক করার জন্য যুক্তিবিজ্ঞানীরা কয়েকটি বিশেষ লক্ষণ উল্লেখ করেছেন। এইগুলির মধ্যে তিনটি লক্ষণ প্রধান। এই লক্ষণ তিনটি হল- সামান্যীকরণ, সিদ্ধান্তে হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যাওয়া এবং হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের অভাব।
সামান্যীকরণ: আরোহ অনুমান হল একটি সামান্যীকরণ প্রক্রিয়া। আরোহ অনুমানে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সেই জাতীয় সকল বস্তু বা ঘটনা সম্বন্ধে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উদাহরণ:
লোহা গরম করলে প্রসারিত হয়।
তামা গরম করলে প্রসারিত হয়। অ্যালুমিনিয়াম গরম করলে প্রসারিত হয়।
অতএব, সব ধাতু গরম করলে প্রসারিত হয়।
উপরোক্ত উদাহরণে কয়েকটি ধাতুকে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। কেন-না অভিজ্ঞতার দ্বারা সব ধাতুকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এইভাবে কয়েকটি ধাতুকে গরম করলে প্রসারিত হতে দেখে ‘সব ধাতু গরম করলে প্রসারিত হয়’ এইরূপ সিদ্ধান্ত করাই হল সামান্যীকরণ।
সিদ্ধান্তে হেতুবাকাকে অতিক্রম করে যাওয়া:
আরোহ অনুমানের একটি বিশেষ লক্ষণ হল ‘সিদ্ধান্তে হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যাওয়া।’
উদাহরণ:
রাহুলের পিতা হন স্নেহশীল।
রিমির পিতা হন স্নেহশীল।
অজয়ের পিতা হন স্নেহশীল।
অতএব, সকল পিতা হন স্নেহশীল।
উপরোক্ত উদাহরণে রাহুল, রিমি ও অজয়-এই কয়েকজনের পিতাকে স্নেহশীল দেখে সিদ্ধান্ত করা হল সকল পিতা হন স্নেহশীল। এখানে আশ্রয়বাক্যে কয়েকজন পিতার উল্লেখ থাকলেও সিদ্ধান্তে সকল পিতার উল্লেখ থাকায় সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যকে অতিক্রম করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরোহ অনুমানে এইভাবে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একপ্রকার ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা থাকে। এই ঝুঁকিকে আরোহমূলক লাফ বা ঝুঁকি বলা হয়।
হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের অভাব:
আরোহ অনুমানের আরও একটি বিশেষ লক্ষণ হল, আরোহ অনুমানের হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধের অভাব থাকে। প্রসক্তি সম্বনধ হল দুটি বিষয়ের মধ্যে অনিবার্য সম্পর্ক। বৈধ অবরোহ যুক্তিতে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ থাকে। এইজন্য অবরোহ যুক্তিতে সিদ্ধান্ত হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। কিন্তু আরোহ অনুমানে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনোরূপ প্রসক্তি সম্বন্ধ থাকে না। সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যায় বলে সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না।
উদাহরণ:
বনের পাখির ডানা আছে।
খাঁচার পাখির ডানা আছে।
পোষা পাখির ডানা আছে।
অতএব, সব পাখির ডানা আছে।
এক্ষেত্রে হেতুবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে। কারণ হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে অনেক অপর্যবেক্ষিত দৃষ্টান্ত থেকে যায়। তাই সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হতে পারে না।