বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান বলতে কী বোঝো? এই অনুমানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দাও

বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান বলতে কী বোঝো? এই অনুমানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দাও।

এর বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান : যে আরোহ অনুমানে বিশেষ বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের দ্বারা প্রকৃতির একরূপতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় তাকে বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান বলে।

উদাহরণ:

রহিম হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।
অজয় হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।
রাকেশ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।
সুমনা হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।
এতএব, সব মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন।

বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল-

সামান্য সংশ্লেষক বচনের প্রতিষ্ঠা: বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই অনুমানে যে সামান্য বচনটি প্রতিষ্ঠা করা হয় তা সংশ্লেষক, বিশ্লেষক নয়। যে বচনের বিধেয়টি কেবলমাত্র উদ্দেশ্য পদের জাত্যর্থ কিংবা জাত্যর্থের অংশ বিশেষকে বিশ্লেষণ করে, তাকে বলা হয় বিশ্লেষক বচন। এই জাতীয় বচন হল সংজ্ঞার্থজ্ঞাপক। কাজেই এক্ষেত্রে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কোনো নতুন তথ্য দেয় না। যেমন- ‘সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।’ অপরপক্ষে যে বচনের বিধেয়টি উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নতুন কোনো তথ্য দেয় তাকে বলা হয় সংশ্লেষক বচন। যেমন- ‘সকল মানুষ হয় হাস্যপ্রিয় জীব।’ এই জাতীয় বচনের বিধেয় পদ যে নতুন জ্ঞান দেয় তা উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় না। তাই বলা যায় যে আরোহ অনুমান সর্বদাই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করে।

পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ: বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই অনুমান বিশেষ বস্তু বা ঘটনার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের উপর নির্ভর করে। আরোহ অনুমানে আমরা কয়েকটি বিশেষ বস্তু বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি। যেমন-রাম, শ্যাম, যদু, মধু প্রমুখ কয়েকজনের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করে আমরা অনুমান করি যে ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষণের সাহায্যে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করে সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। যেমন- কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্ত পরীক্ষণ করে আমরা অনুমান করি যে- ‘সকল ক্ষেত্রে তাপ দিলে বস্তু আয়তনে বাড়ে।’ এইজন্যই পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণকে আরোহ অনুমানের বস্তুগত ভিত্তি বলা হয়।

প্রকৃতির একরূপতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়ম: বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমান দুটি মূল নিয়মের উপর নির্ভর করে- একটি হল প্রকৃতির একরূপতা নীতি এবং অপরটি হল কার্যকারণ নিয়ম। এই দুটি নিয়মের জন্যই ‘আরোহ অনুমান সংক্রান্ত লাফ’ দেওয়া সম্ভব হয়। এই দুটি নিয়ম হল আরোহ অনুমানের স্বীকার্য সত্য। প্রমাণ ছাড়াই এই নিয়ম দুটিকে গ্রহণ করা হয়। প্রকৃতির একরূপতার অর্থ হল ‘প্রকৃতি সম অবস্থায় সম আচরণ করে’। অথবা একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ‘প্রকৃতি একই রকম আচরণ করে’।

আর কার্যকারণ নিয়মের অর্থ হল ‘প্রতিটি ঘটনারই কারণ আছে’। এই দুটি নিয়মের উপর নির্ভর করেই ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব’-এই সামান্য সংশ্লেষক বচনটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। বস্তুত আরোহ অনুমানের সামান্যীকরণ প্রক্রিয়ার মূলে আছে প্রকৃতির একৰূপতা নীতি এবং কার্যকারণ নিয়ম। এই দুটি নিয়মের সাহায্যেই আমরা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে বিশেষ সত্য থেকে সামান্য সত্যে উপনীত হতে পারি। এই জন্যই এই দুটি নিয়মকে আরোহ অনুমানের আকারগত ভিত্তি বলা হয়।

Leave a Comment