উপমাযুক্তির মূল্যায়নের মানদণ্ডগুলি আলোচনা করো।
উপমাযুক্তির ভিত্তি হল অসম্পূর্ণ সাদৃশ্য। তাই এই যুক্তির সিদ্ধান্তটি সম্ভাব্য হয়। তবে এই সম্ভাব্যতার মাত্রাভেদ আছে। অর্থাৎ কোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা বেশি হতে পারে। আবার কোনো ক্ষেত্রে কম হতে পারে। যেসব মানদণ্ডের উপর উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা নির্ভর করে সেগুলি হল-
দৃষ্টান্তের সংখ্যা: হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের সংখ্যা যত বেশি হবে, উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।
জ্ঞাত সাদৃশ্য: হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের মধ্যে জ্ঞাত সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে, উপমাযুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।
ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য : হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে ব্যক্তিগত বৈসাদৃশ্য যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।
সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা: উপমাযুক্তির মূল্যায়নের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হল-সাদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা। হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের সঙ্গে সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্তের সাদৃশ্য প্রাসঙ্গিক হলে যুক্তির সিদ্ধান্ত অনেক বেশি সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য হবে। অপরদিকে সাদৃশ্যের বিষয় অপ্রাসঙ্গিক হলে যুক্তির সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা কম হবে।
উদাহরণ:
রামের রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে সে যক্ষ্মা রোগী।
শ্যামেরও রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে সে যক্ষ্মা রোগী।
অতএব, যে ওষুধ খেয়ে রাম ভালো হয়েছে, শ্যামও সেই ওষুধ খেয়ে ভালো হবে।
রাম ও শ্যামের গায়ের রং কালো, দেহের ওজন এক, উচ্চতাও এক, বয়সও এক এবং উভয়ে একই গ্রামে বাস করে।
অসুস্থ রাম কুইনাইন খেয়ে ভালো হয়েছে। অতএব, অসুস্থ শ্যামও কুইনাইন খেয়ে ভালো হবে।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা অনেক কম, আর প্রথম দৃষ্টান্তে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা অনেক বেশি। কারণ প্রথমটিতে সাদৃশ্যের সংখ্যা কম থাকলেও তা প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।
অজ্ঞাত গুণাবলি: হেতুবাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তের মধ্যে জ্ঞাত গুণাবলির তুলনায় যদি অজ্ঞাত গুণাবলির সংখ্যা ও গুরুত্ব বেশি হয়, তাহলে উপমাযুক্তির সিদ্ধান্ত কম সম্ভাব্য হবে।
উপমাযুক্তির ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্য ও অজ্ঞাত গুণাবলির সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা তত কম হবে। অপরপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের সংখ্যা যত বেশি হবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাও তত বেশি হবে।