…গাঁ-সুদ্ধ লোক যেন অপ্রস্তুত হয়ে রইল।” -গ্রামের লোকদের এই অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো

…গাঁ-সুদ্ধ লোক যেন অপ্রস্তুত হয়ে রইল।” -গ্রামের লোকদের এই অপ্রস্তুত হওয়ার কারণ কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পটিতে কার্তিক মাসের মধ্যভাগে তিনদিনের ব্যবধানে উল্লিখিত গ্রামটিতে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যবয়সি জোয়ান বলাই চক্রবর্তীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল গ্রামের দক্ষিণে ঘোষদের মজা পুকুরের ধারে একটা মরা গজারি গাছের তলায়। সম্ভবত লাঠির অনেকগুলি আঘাতে তার মাথাটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় খুনটি ছিল শুভ্রা নামে ষোলো-সতেরো বছরের একটি রোগা ভীরু মেয়ের। গ্রামের শেষ সন্ধ্যাবাতিটি যখন জ্বালা হয়েছে এরকম সময়ে বাড়ির পিছনের ডোবার ঘাটে গলা টিপে মেরে কেউ শুভ্রার মৃতদেহ ফেলে রেখে গিয়েছিল।

বলাই চক্রবর্তীর অপমৃত্যু গ্রামের লোকদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না, অনেকের কাছে তা কাম্যও ছিল। কিন্তু শুভ্রার মৃত্যু নিয়ে হইচই কম হলেও গ্রামের মানুষের কৌতূহল এবং বিস্ময় এই ঘটনায় সীমাহীন ছিল। গৃহস্থ ঘরের সাধারণ মেয়ে, সকলের চোখের সামনেই তার বেড়ে ওঠা, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল এবং মাসখানেক আগে বাবার বাড়িতে এসেছিল সন্তান প্রসব করার জন্য। এরকম একটি গৃহস্থ ঘরের সাধারণ মেয়ের এই পরিণতি গ্রামের লোকদের কাছে অকল্পনীয় ছিল। তার মতো একটি মেয়ের জীবনে খাপছাড়াভাবে লুকানোর মতো কিছু আছে, যা এরকম ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে; তা এমনকি পাশের বাড়ির মেয়েটির কাছেও অকল্পনীয় ছিল। সেই কারণেই শুভ্রার মৃত্যুতে গ্রামসুদ্ধ লোকেরা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।

Leave a Comment