“আমি তো পাস করা ডাক্তার নই….।” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। বক্তা সম্পর্কে কাহিনি থেকে যা জানা যায় নিজের ভাষায় লেখো

“আমি তো পাস করা ডাক্তার নই….।” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো। বক্তা সম্পর্কে কাহিনি থেকে যা জানা যায় নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পতে নবীনের স্ত্রী দামিনীর গায়ে বাতাস লাগে। দামিনীর হাত থেকে লণ্ঠন ছিটকে গিয়ে পড়ে দক্ষিণের ঘরের বারান্দায়। উঠোনে ছিটকে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে দামিনী অজ্ঞান হয়ে যায়। আর এই সময়েই ঝোড়ো হাওয়া দালানের আনাচে-কানাচে যেমন গুমরে গুমরে কাঁদে, দামিনী সেইরকম আওয়াজ করতে থাকে। শুভ্রার দাদা ধীরেন পাস না করা হলেও গ্রামের একমাত্র ডাক্তার। তাকেই ডেকে আনা হয় দামিনীর চিকিৎসার জন্য। দামিনী তখন অর্থহীন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, আপনমনে হাসছে-কাঁদছে, যারা তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছিল তাদের আঁচড়ে কামড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ধীরেন তাকে দেখে কিছুটা আত্মপ্রত্যয়ের অভাববোধ করে। বলে যে, সে চিকিৎসা করতে পারে কিন্তু যেহেতু সে পাস করা ডাক্তার না; তাই দায়িত্ব নিতে ভরসা পাচ্ছে না। শা’পুরের কৈলাশ ডাক্তারকে ডাকার পরামর্শও সে দিয়েছিল।

ধীরেন ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাস করে সাত বছর গ্রামের স্কুলে ভূগোল পড়ায়। প্রথম দিকে প্রবল উৎসাহের সঙ্গে সাতচল্লিশখানা বই নিয়ে লাইব্রেরি, সাতজন ছেলেকে নিয়ে তরুণ সমিতি, সাধারণ অসুখ-বিসুখে বই পড়ে বিনামূল্যে ডাক্তারি এইসব কাজে জুড়ে ছিল। কিন্তু একটি গ্রাম্য মেয়েকে বিয়ে করে দু-বছরে চারটি ছেলেমেয়ের জন্ম হওয়ার পরে তার উদ্যমে ঘাটতি এসেছে। তার লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা তিনশোতে এসেই থেমে গিয়েছে। এখন সেই বইয়ের তালাবন্ধ লাইব্রেরি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়েই থেকে গিয়েছে। বছরে দু-তিনবার তরুণ সমিতির মিটিং হয়। আর ডাক্তারির বিনিময়ে ধীরেন এখন চার-আনা আট-আনা ফি নেয়, ওষুধ বিক্রিও করে।

Leave a Comment