“কুঞ্জ মাঝির সাথে তো চালাকি চলবে না।” -কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছে? নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কুঞ্জ যা যা করেছিল তার বর্ণনা দাও

“কুঞ্জ মাঝির সাথে তো চালাকি চলবে না।” -কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছে? নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কুঞ্জ যা যা করেছিল তার বর্ণনা দাও।

উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে নবীনের স্ত্রী দামিনী যখন সন্ধ্যাবেলা লণ্ঠন হাতে রান্নাঘর থেকে উঠোন পার হয়ে শোওয়ার ঘরে যাচ্ছিল সেই সময় খুব হালকা একটা দমকা বাতাস বাড়ির পুব কোণের তেঁতুল গাছের পাতা ছুঁয়ে তার গায়ে এসে লাগে। দামিনীর হাত থেকে লণ্ঠন ছিটকে গিয়ে পড়ে দক্ষিণের ঘরের বারান্দায়। উঠোনে ছিটকে পড়ে হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে দামিনী অজ্ঞান হয়ে যায়। পঙ্কজ ঘোষালের পরামর্শ মতো নবীন ডেকে আনে কুঞ্জ গুনিনকে। ‘নামকরা’ গুনিন কুঞ্জ দামিনীকে প্রথম দর্শনেই নিশ্চিত হয়ে যায় ভরসন্ধ্যায় তাকে অশরীরী ভর করেছে এবং সহজে। ছাড়বেন না। সেই সঙ্গেই অভয় দেয় যে, শেষ অবধি দামিনীকে ছেড়ে যেতেই হবে। এই প্রসঙ্গেই সে উল্লিখিত মন্তব্যটি করে।

ঘরের দাওয়া থেকে প্রথমেই সকলকে উঠোনে নামিয়ে দেওয়া হল। তারপর কুঞ্জ মন্ত্র পড়তে পড়তে বারান্দায় জল ছিটিয়ে দিল। দামিনীর এলোচুল এমনভাবে দাওয়ার একটা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হল যে সে না পারল বসতে, না পালানোর উপায় থাকল। চুলে টান লেগে দামিনী ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলে ধীরেন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা গুরুত্ব পায় না। উপস্থিত মানুষেরা মুগ্ধ বিস্ময়ে কুঞ্জর কার্যকলাপ দেখতে থাকে। কুঞ্জ নানাদিকে ঘুরে ঘুরে দুর্বোধ্য মন্ত্র পড়তে থাকে। মালসাতে আগুন করে তাতে শুকনো পাতা আর শিকড় পোড়াতে থাকে। একসময়ে দামিনীর ছটফটানি কমে আসতে আসতে সে নিস্পন্দ হয়ে যায়। কুণ্ডু জানতে চায় তার পরিচয়। দামিনীর কাছ থেকে উত্তর আসে যে সে খুন হয়ে যাওয়া শুভ্রা। এবং পুনরায় কোনো প্রশ্ন করার আগেই শুভ্রা উত্তর দেয় যে বলাই চক্রবর্তী তাকে খুন করেছে। কুঞ্জর অভিপ্রায় এভাবে সফল হয়।

Leave a Comment