“…. শুধু আছে তীব্র উত্তেজনা এবং কৌতূহল-ভরা পরম উপভোগ্য শিহরণ।” যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক এ কথা বলেছেন নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে গায়ে বাতাস লেগে অসুস্থ হয়ে পড়া দামিনীকে সুস্থ করে তুলতে পঙ্কজ ঘোষালের পরামর্শে ডেকে আনা হয়েছিল নামকরা কুঞ্জ গুনিনকে। তার গুণপনা দেখার লোভে বহু মানুষ সেখানে ভিড় করেছিল। লেখকের ভাষ্যে অন্তত তিরিশ-পঁয়ত্রিশজন পুরুষ ও নারী এবং গোটা পাঁচেক লণ্ঠন জড়ো হয়েছিল। তার মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা খুব কম এবং কমবয়সি মেয়েদের সেখানে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো মানুষগুলি দাওয়ায় গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকে। দামিনীর উপরে ভর করা অশরীরী তাড়ানোর জন্য কুঞ্জর ক্রিয়াকর্ম প্রায় অত্যাচারের পর্যায়ে চলে গেলে ধীরেন তীব্র আপত্তি জানায়। কিন্তু উপস্থিত জনতার ‘দুর্লভ রোমাঞ্চ’ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করার কোনো ক্ষমতা দামিনীর স্বামী নবীনের ছিল না। নবীনের বাড়ির দাওয়াটি যেন হয়ে উঠেছে মঞ্চ। আর সেখানে জ্ঞানবুদ্ধির অতীত রহস্যকে সহজবোধ্য নাটকের রূপ দিয়ে অভিনয় করা হচ্ছিল। কুঞ্জ যেন সেখানে আমদানি করেছে ‘জীবনের শেষ সীমানার ওপারের ম্যাজিক’। দামিনীর মধ্যে অশরীরী আত্মার আবির্ভাব তখন সকলের কাছেই যেন অতিবাস্তব এবং অত্যন্ত স্বাভাবিক। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে তখন আর কোনো ভয়ের অনুভূতি নেই, পরিবর্তে আছে শুধুই ‘তীব্র উত্তেজনা এবং কৌতূহল-ভরা পরম উপভোগ্য শিহরণ’।