হারুন সালেমের মাসি ছোটোগল্প অবলম্বনে যশোদা চরিত্রটি আলোচনা করো

হারুন সালেমের মাসি ছোটোগল্প অবলম্বনে যশোদা চরিত্রটি আলোচনা করো। 

যশোদার জীবনযুদ্ধ: মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যশোদা বা যশি। সে স্বাবলম্বী, সংগ্রামী এক নারী। সাত বছর বয়স থেকে সে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ “ওদের পুরুষরা কোনোদিন ভাত-কাপড় দেয় না, যশির বরও দেয় না। যশিরা শরীরে খেটে সংসার বেঁধে তোলে।”

চেহারা ও স্বভাববৈশিষ্ট্য: যশির মুখটি পানপাতার মতো হরতনি ছাঁদের, নাকটি চাপা, দৃষ্টি সতর্ক। নানারূপ তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে জীবন চিনতে শিখিয়েছে। রূঢ় বাস্তবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যশিকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। তাই আপাতভাবে তার স্বভাব অত্যন্ত বৃঢ়, কথাবার্তা খুব রুক্ষ। কঠিন-কঠোর বাস্তব জীবনই তাকে এসব শিখিয়েছে। তাই “দয়া-টয়া দেখলে ওর অঙ্গ জ্বলে।” যশি নিজের জীবনে কারও কাছে দয়া পায়নি। ছোটোবেলা থেকে তাকে খেটে খেতে হয়েছে। এখন সে চাল বিক্রি করে। সঙ্গে নিয়ে যায় গৌরবি-আয়েছাদের সংগৃহীত শাকপাতা-গুগলি। ট্রেনে বসার জায়গা, চাল বিক্রির লাভের টাকা সবকিছুই – জোরজবরদস্তি করে আদায় করতে হয় তাকে। সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যশি সদাব্যস্ত। তাই তার দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলার অবসর থাকে না। ছুটে চলে যশি।

বাস্তবতাবোধ: যশোদার বাস্তবতাবোধ প্রবল। মুসলমান বালক অনাথ হারাকে কাছে রাখার ব্যাপারে গৌরবি হিন্দু সমাজের বাধার সম্মুখীন হবে ও বড় বিপদে পড়বে তা সে জানে। তখন হারাকে শহরে উদ্বাস্তুদের ভিড়ে ছেড়ে আসার বাস্তব পরামর্শ দেয় যশি, আপাতভাবে একথা নিষ্ঠুর শোনালেও গল্পের শেষে শহরের ভিড়েই মিশে যেতে দেখা যায় হারা ও গৌরবিকে- সেটাই ছিল তাদের ভবিতব্য।

আপাত রুক্ষতার আড়ালে স্নেহমমতা: বাইরের রুক্ষতার আড়ালে যশির মধ্যেও রয়েছে এক মমতাময় হৃদয়। সে তার ছেলেপিলেকে জন্তুর মতো জাপটে ভালোবাসে, স্বামীকে তোয়াজ করে কাছে রাখে। সংসারকে সচ্ছল করার জন্য সর্বদা পরিশ্রম করে। আয়েছা-গৌরবির মতো অসহায় নারীদের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়ে সাহায্য করে। যশি তার না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করে না বরং পরিশ্রম দ্বারা অর্জিত ফল নিয়ে সে নিজের জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চায়।

যশি আসলে একটি শ্রেণিচরিত্র। গল্পের দরিদ্র, শোষিত, মেহনতি, নারীসমাজের প্রতিনিধি যশোদা।

Leave a Comment